পতিতার পত্র (Patitar Patra)
সুলোচনা ভদ্র ঘরের মেয়ে। বেশ্যার ঘরে তার জন্ম নয়। তার বাবা ছিলেন নামী ঊকিল এবং ব্রিটিশ ভারতের জননায়ক। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবীদের রসদ জোগাতেন। এ হেন সুলোচনার বিয়ে হয় সৎ মায়ের দেখে দেওয়া পাত্রে কিন্তু অকালবৈধব্যে তাকে আবার ফিরে আসতে হয়ে পিতৃগৃহে। বাবাতে আর মেয়েতে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লো দেশমাতৃকার শৃঙ্খলমোচনে। তারপর সুলোচনার জীবনে এলেন দুজন মহাপ্রাণ দেশনেতা, যাদের সান্নিধ্য পেতে চাইতো সে সর্বক্ষণ। এরপর সুলোচনার কাছে, দেশের স্বাধীনতার চাইতে বড় হয়ে ওঠে ঐ দুজন পুরুষকে কাছে পাবার বাসনা। আর এই বাসনা, সংসারকামী চিন্তাই কাল হয়েছিলো সুলোচনার। সোজা ঠাঁই হলো বাড়ি থেকে বারাণসীর নিষিদ্ধপল্লীতে। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে সুলোচনা তার আত্মকথা লিখে এবং তার সমস্ত জমানো আন্দাজ ত্রিশ হাজার টাকা দেশের কাজে দান করে যায় ডাক্তারবাবুর কাছে। তার শেষ আক্ষেপ ছিলো “আমার সর্বনাশ না করলে কি ভারতবর্ষ স্বাধীন হতো না?” শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে “পতিতার পত্র” দেখায় যে একজন নারীর মন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সমাজকে “সংসার করেও কি দেশের কাজ করা যায় না?”
All Episodes
রাম এবং লক্ষ্মণ যখন সুলোচনার পিতৃগৃহে থাকছিলেন দেশের কাজে তখন তার বিরতির কোন শেষ ছিলো না। সৎ মা বিধবা সুলোচনাকে শাসনে আটকে রাখতে চাইতেন কিন্তু একদিন রাম বলে বসলেন, “বিধবা হবার দোষে কোন মেয়ের জাত যায় না”। সুলোচনার সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ খেলে যায়। বন্যা নামে সমস্ত শরীর জুড়ে যখন রাম বলে, ” অন্দরমহলে যে এমন বৈচিত্র্য আছে জানলে সদরমহলে কখনো আসতুম না।” প্রায় যখন সুলোচনার বাসনার বাঁধ ভাঙতে বসেছে ঘনিষ্ঠ শ্বাসের ওঠানামায় তখন ঐ একই ঘরে লক্ষ্মণের প্রবেশ ঘটে। তারপর?
রাম এবং লক্ষ্মণ দুজনেই কি তবে প্রেমে পড়লেন সুলোচনার? সুলোচনা এখন অবশ্য শরীরে হোক বা মনে সে প্রেমে ভিজতে চায়, “যে আমাকে গ্রহণ করবে আমি তার হয়ে যাবো!” রামের প্রকৃতি সুলোচনার বড় পছন্দের কারণ রাম বেশ রসবোধ সম্পন্ন মানুষ লক্ষ্মণ ঠিক তার উল্টো, কঠিন চেহারা, রুক্ষ্ম ব্যবহার। এ হেন রাম যখন ব্রিটিশ পুলিশের ভ্যানে গ্রেফতার হয়ে চলে যেতে থাকে তখন সুলোচনাও আর বাকিদের মতো চোখের জল ফেলেছিলো। শুধু তফাৎ ছিলো এইটে আমজনতা তাদের প্রিয় নেতার জন্য চোখ ভিজিয়েছিলেন আর সুলোচনা তার প্রিয় মানুষটার তথা প্রেমিকের জন্য ! লক্ষ্মণ সবটা খেয়াল করে হাত চেপে ধরে সুলোচনার। কাঁটা দিয়ে যায় সারা শরীর। তবে কি রামের অনুপস্হিতিতে লক্ষ্মণ তাকে পেতে চাইছে?
সুলোচনার পিতৃগৃহে এখন আর আগের মতো বিপ্লবী নেতারা তেমন আসেনা। লক্ষ্মণও উপরতলার নির্দেশে ঠিকানা বদলাতে চায়। সুলোচনার সাজিয়ে নেওয়া নিজের পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসে। সৎ মাকে সুলোচনা এখন আর ভয় পায় না। কিন্তু যে নতুন জীবনের নেশায় সে বুঁদ হয়েছিলো তা হারাতে হবে ভেবে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই সময়ই লক্ষ্মণ তাকে প্রস্তুত হতে বলে কোনরকম পিছুটান ছাড়া বাইরে বেরোনোর জন্য। সুলোচনা কোনকিছু চিন্তা না করে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ে নারী ভাগ্য সন্ধানে! সমস্তটা সময় ট্রেনে যেতে যেতে সে হিসেব করে তার নতুন জীবন লক্ষ্মণের সঙ্গে শুরু করার জন্য। ভ্রম ভাঙে নিষিদ্ধপল্লীতে পৌঁছে। লক্ষ্মণ জানায়, এ ছাড়া তার উপায় ছিলো না রামকে বাঁচানোর জন্য। সুলোচনা স্তম্ভিত হয়ে যায়, এই প্রেতজীবনকেই আপন করে নেয় মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত।
5
1
vote
Rating
Subscribe
Connect with
Login
I allow to create an account
When you login first time using a Social Login button, we collect your account public profile information shared by Social Login provider, based on your privacy settings. We also get your email address to automatically create an account for you in our website. Once your account is created, you'll be logged-in to this account.
DisagreeAgree
I allow to create an account
When you login first time using a Social Login button, we collect your account public profile information shared by Social Login provider, based on your privacy settings. We also get your email address to automatically create an account for you in our website. Once your account is created, you'll be logged-in to this account.
DisagreeAgree
Please login to comment
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments










